Search

এই বিভাগের আরো খবর

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ২ বছর পূর্তি আজ

দেশপ্রান্তর:

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের আজ দুই বছর। পশ্চিমা সহায়তার অভাবে দুর্বল হয়ে পড়া ইউক্রেন যুদ্ধের নতুন বছরে প্রবেশ করেছে। আর যেখানে রাশিয়া অর্জন করেছে ইউক্রেনের নতুন শহর। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে ভোরবেলা ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

তখন অনেকেই কয়েক দিনের মধ্যে মস্কোর বিজয়ের আশা করেছিল, কিন্তু ইউক্রেন পাল্টা লড়াই চালিয়ে যায় তখন এবং রুশ সেনারাও পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছিল।

কিন্তু ইউক্রেন ২০২৩ সাল পাল্টা আক্রমণ চালতে ব্যর্থ হয়। রুশ সেনাবাহিনী তখন যুদ্ধ ক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে। ইউক্রেন সেনাবাহিনী লোকবলের অভাবে এবং কামান ও বিমান প্রতিরক্ষার জন্য পশ্চিমা সামরিক সহায়তা কমে যাওয়ায় এই অবস্থার সম্মুখীন হয়।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার বলেছেন, অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্তগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ২য় বার্ষিকীতে ইইউ কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেয়েনসহ পশ্চিমা নেতাদের সফর দেখা যাবে, তবে মার্কিন কংগ্রেস ইউক্রেনের জন্য অত্যাবশ্যক ৬০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা প্যাকেজ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে, কিয়েভের সামনে অন্ধকার অপেক্ষা করছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রিপাবলিকান আইন প্রণেতাদের তহবিল না আটকানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “ইতিহাস অপেক্ষা করছে এবং এই সংকটময় মুহূর্তে ইউক্রেনকে সমর্থন করতে ব্যর্থতা কেউ ভুলে যাবে না।”

এ বছর ১৭ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনের আভদিভকা শহর দখল করে নেয়। এরপর সর্বশেষ ডোনেটস্ক অঞ্চলে কাছে ধ্বংস হওয়া শহর মেরিঙ্কাসহ পূর্বে ব্যাপক আক্রমণ চালাচ্ছে। পুতিন ইউক্রেনের একটি শহর দখল করে নেওয়ায় সেনাদের ‘সত্যিকারের জাতীয় বীর’ বলে প্রশংসা করেছেন। তিনি যুদ্ধের বছরগুলোতে সেনাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।

কিয়েভ প্রথমে ধাক্কা খেলেও স্থানীয়রা বলছে তারা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে।

কিয়েভের পুষ্টিবিদ ওলগা বাইরকো বলেছেন, “ইউক্রেনের নারীদের জন্য একটাই ব্যথা, সেটা আমাদের স্বামীদের জন্য, আমাদের সন্তানদের জন্য, আমাদের পিতাদের জন্য।” তিনি বলেন, ‘আমি চাই যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব যুদ্ধ শেষ হোক।’

৩৮ বছর বয়সী ব্যবসায়ী ইউরি প্যাসিচনিক বলেছেন, ‘হ্যাঁ আমরা এর সঙ্গে এখন বাঁচতে শিখেছি… এখন যুদ্ধই আমাদের জীবন।’ ৫১ বছর বয়সী কোস্টিয়ানটিন গফম্যান বলেছেন, ‘আমি মনে করি আমাদের আরো অস্ত্র প্রয়োজন। যাতে আমরা এই অশুভ আত্মাকে আমাদের ভূখণ্ড থেকে তাড়িয়ে দিতে পারি এবং আমাদের ইউক্রেনের পুনর্গঠন শুরু করতে পারি।’

এদিকে পলিশ কৃষকদের সীমান্ত অবরোধ করার কারণে ইউক্রেনের অর্থনীতিতেও আঘাত হেনেছে। কিয়েভ বলেছে, দেশের রপ্তানি হুমকির মুখে পড়েছে এবং অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ এবং ইউক্রেনীয় সরকারের সর্বশেষ ধারণা অনুসারে, রুশ আগ্রাসনে ধ্বংস হওয়া শহর ও শহরগুলোকে পুনর্নির্মাণের জন্য ইউক্রেনের প্রায় অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এ ছাড়া ইউক্রেন অনুমান করেছে, এই যুদ্ধে প্রায় ৫০ হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।

গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাচ্ছে

উভয় পক্ষই এই যুদ্ধে সামরিক নিহত ও আহতদের সংখ্যা উল্লেখ করেনি। তবে উভয় পক্ষই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি করেছে বলে দাবি করেছে। ২০২৩ সালের আগস্টে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত দিয়ে বলা হয়, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ৭০ হাজার সেনা নিহত এবং এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার সেনা আহত হয়েছে। গত বছর ডিসেম্বরে ফাঁস হওয়া মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য বলছে, যুদ্ধে ৩ লাখ ১৫ হাজার রুশ সেনা নিহত বা আহত হয়েছে।

বর্তমানে মনোবল কমে যাওয়ার কারণে ইউক্রেনীয় সেনারা রুশ বাহিনীর কাছে তাঁদের ভূমি হারিয়ে ফেলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বখমুতের কাছে একজন সেনা বলেছেন, “আমাদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাচ্ছে এবং রাশিয়ানরা আক্রমন করতেই থাকে। আমাদের অনেক কমরেড আহত হয়েছেন। সবকিছুই আরো বেশি খারাপ হচ্ছে।”

এদিকে মস্কো ব্যাপকভাবে তাদের অস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং ইরানের কাছ থেকে ড্রোন পেয়েছে। কিয়েভ দাবি করছে, রাশিয়ার উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে। তবে এই সংঘাত রাশিয়াকে পশ্চিম থেকে আরো বেশি বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা শতাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাশিয়ার ওপর।

সূত্র: এএফপি, আলঅ্যারাবিয়া

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »