আজ পবিত্র শবেবরাত। আরবি ভাষায় এই রাতকে বলা হয় লাইলাতুল বারাত বা মুক্তির রজনী। শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটিকেই শবেবরাত হিসেবে গণ্য করা হয়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই রাতে ইবাদত-বন্দেগি ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে রহমত কামনা করে।
আল্লাহর অনুগ্রহ, বরকত ও মাগফিরাত কামনা করে। দুঃখ-বঞ্চনা, ব্যথা-বেদনা থেকে মুক্তির জন্য সৃষ্টিকর্তার অনুকম্পা চায়। নিজেদের ভুলত্রুটি বা পাপকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। গুনাহ থেকে মুক্তিলাভ ও ভবিষ্যতের সৌভাগ্যময় প্রস্তুতির জন্য এই রাত প্রত্যেক মুসলমানের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
তাই মহিমান্বিত এই রজনীকে মুক্তির রাত বা সৌভাগ্যের রাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শুধু ব্যক্তিগত জীবনে নয়, জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবনেও সব কিছু শুভ ও সুন্দর হোক, আল্লাহর দরবারে এমন প্রার্থনা করা হয়। সমাজে থাকা অন্যায়, অবিচার, অনাচার, সাধারণ মানুষের কষ্ট-দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে আকুতি জানানো হয়।
শবেবরাতের নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত ও আমল নেই।
তবে সবাই যার যার মতো বিশেষ কিছু আমল করে থাকে। বিশুদ্ধ মতানুসারে এই রাতে নফল আমলগুলো একাকী করণীয়। শবেবরাতের ইবাদতের মধ্যে আছে—বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ শরিফ পাঠ, জিকির-আজকারে মশগুল থাকা। তাওবা-ইস্তিগফার করা। সব মুমিন মুসলমানের ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ ও ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়।
দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে কান্নাকাটি করে রাত কাটিয়ে দেওয়া হয়। রমজান মাসের আগের মাস শাবান। রমজানের সিয়াম সাধনার প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসকেও বরকতময় মাস বলে অভিহিত করা হয়েছে।
শবেবরাতের মূল করণীয় একান্তে ও নীরবে ইবাদত করা। এই রাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে বেশি বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করা। নফল নামাজ, দোয়া ও ইস্তিগফারের পাশাপাশি এই রাতে আমরা কোরআন তিলাওয়াতের আমলটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতে পারি। বরকতময় এই রজনীতে মুমিনদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ বর্ষিত হয়। এই রাতে যারা আল্লাহর কাছে রহমত ও বরকত প্রার্থনা করে, তারা তা পায়, তারা সৌভাগ্য লাভ করে।
এ বছরও আমরা যখন শবেবরাত পালন করতে যাচ্ছি, তখন করোনা মহামারির পরপরই যুদ্ধের কারণে বিশ্বময় এক অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে আমাদের আরো বেশি করে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে, মনোযোগী হতে হবে এবং আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। শবেবরাতে আজ আমরা ব্যক্তিজীবনের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে দুঃখ ও দুর্ভোগ লাঘবের জন্য মহান আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা জানাব। সবার জীবনে মুক্তি আসুক, মনের সব কালিমা দূর হোক এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাক মানবজাতি—এটাই হোক আজকের বিশেষ প্রার্থনা।